Literature Corner

যদি ভালোবাসা যেত — সাজ্জাদ এইচ হৃদয়

কবিতার মতো করে যদি ভালোবাসা যেত,
ঐ চোখ, ঐ ঠোঁট ভালোবাসা পেত ।
যদি প্রিয়ার কাছাকাছি আর কিছু হত,
এই হাত পা নিয়ে হত মাথা নত।

যদিও বা ফুটে গোলাপ — সাজ্জাদ এইচ হৃদয়

জীবনের বেশ খানিকটা পথ হাটা হয়েছে বেখেয়ালে,
কত বার গোধূলি দেখার বাসনা চুকে গেছে ক্লান্ত বিকেলে।
তবুও জীবন এগিয়েছে আরও কিছু মাইল, আরও কিছু ভোর,
তবুও জীবন , এইতো জীবন।
চলুকনা জোছনা ধোঁয়া অন্ধকারে আরও কিছুটা স্বপ্নের চাষ ,
ক্ষতি কি তাতে যদিও বা ফুটে গোলাপ সীমাহীন আশা নিয়ে জীবনের কোন বাকে !

অগ্নিমূর্তি — সাজ্জাদ এইচ হৃদয়

লাল বাস থেকে মাত্রই নামলাম। এখন সোজা হাটা দিবো। গন্তব্য বাসা। রিক্সা, গাড়িতে গিজগিজ করছে রাস্তা। তবুও হাঁটছি। ভাল লাগছে। কোন কাজ করার ক্ষেত্রে ভালো লাগলেই হল। কিছুদূর এগুতেই দেখলাম এক ভদ্রলোক শসা কেটে বিক্রি করছে। আমাকে দেখেই হি হি মারকা হাসি দিয়ে বলল, কয় খান? আমি বললাম, বরাবর। আমার হাতে শসা এলো। লবণ মাখিয়ে খেতে বেশ ভাল জিনিস এটি। টাকা না দিয়ে সোজা হাটতে লাগলাম। বেচারাকে অগ্রিম টাকা দেওয়া ছিল। মাঝে মাঝে সুযোগ পেলে শোধ করি আর কি। একটু দুরেই এক মুড়িওয়ালা। সামনে যাওয়া মাত্রই মুড়ি ধরিয়ে দিলো। একটু ভাব নিয়ে বলল, দূর থাইকা দেক্ষাই বুজ্জছি মুড়ি চাইবেন। আমি মুড়ি চিবুচ্ছি। পঞ্চাশ টাকার একটা নোট দিলাম। মাসাল্লাহ! ফেরত দেউয়ার নাম গন্ধ নাই। বেহায়ার মত আমিও চাই নাই ফেরত। এগেইন হাটা। সোজা ! পেয়ারা ওয়ালাটা নতুন। দাম দর করে একটা পেয়ারা নিলাম। কামড়ে খেতে শুরু করলাম। এখনও পর্যন্ত পেয়ারাতে কামর দিয়েই সবচেয়ে বেশি মজা পাই মনে হচ্ছে। পাশেই কে ক্র্যাফট এর একটা স্টল । কামড়া কামড়ি চলছে! কচ কচ আওয়াজ হচ্ছে। ঢুকলাম স্টল এ। সেলসম্যান এর কি হাঁসি ! আহা! বেশ কিছু দিন পর দেখে খুশি ই হয়েছে। চকচকা হাঁসি মুখে বলে উঠলো, স্যার, আপনার জন্য বেশ কিছু ভাল পাঞ্জাবি বেছে রেখেছি। একটু যদি দেখতেন ! আমি দুটা পাঞ্জাবি লোকটার হাতে দিলাম, ভিসা কার্ড টাও দিলাম সাথে। এই লোক আমার পাঞ্জাবির মাপ জানে। পেয়েরা চাবানো চলছে। কিছু মেয়েদের পোশাকও দেখছি। পাশেই একজন থম ধরে দাড়িয়ে। কিছুক্ষন পর আমাকে বলে উঠলেন, আরে আপনি সাজ্জাদ স্যার না ! আমি একটু তাকালাম। এতো সুন্দরি মেয়ে স্যার ডাকছে, ব্যাপারটা কি ! গরগর করে বলতে লাগলেন, স্যার আমি আপনার অমুক ব্রাঞ্চ এর ছাত্রী, ডি ইউ তে পড়ছি এখন। আপনার ইংরেজি ক্লাস এখনও মনে পড়ে। স্যার, আপনি কেমন আছেন? আমি শুধু বললাম, গুড, ভেরী গুড। ওদিকে ম্যানেজার ডাকছে, বিল করা হয়ে গেছে। আমি ধুম করে চলে এলাম ক্যাশ এর এখানে। সব হিসাব মিটিয়ে বের হচ্ছি। দরজা খুলছে, আমি বের হচ্ছি। একটু পেছনে তাকালাম। কি অদ্ভুদ ! দেবীর মত একজন রেগে আগুন হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে! আমি পেয়ারায় আর একটা কামড় দিয়ে প্রস্থান করলাম।

জোছনায় তুমি আমি — সাজ্জাদ এইচ হৃদয়

খুব সুন্দর একটা চাঁদ উঠেছে নাকি ! দেখতে খুব ইচ্ছে হল। বারান্দায় গিয়ে তাকালাম আকাশের দিকে। চাদের দেখা পাওয়া গেল না। গোল গলা একটা ফতুয়া পরলাম। বুঝতে পারলাম শীত শীত লাগছে। গোছান চাদরটা এলোমেলো করে জড়িয়ে নিলাম শরীরে। পকেটে কিছু টাকা , হাতে চাবি। সোজা মেইন রোড এ যাব। এক কাপ চা হাতে দেখব চাঁদ। রাস্তার মাঝামাঝি চোখ চলে গেল আকাশে। খানিকটা বেকুব এর মতই চাঁদ দেখা শুরু করলাম। একমাত্র বোকারাই সৌন্দর্যকে চরমভাবে উপভোগ করতে পারে। পেছন থেকে একটা গাড়ি হর্ন দিচ্ছে, এই যে কবি ! মারা পরবেন তো । আমি পেছনে তাকালাম। মেয়েটা পরিচিত। গাড়ি থেকে নেমে জোর করেই গাড়িতে উঠানোর চেষ্টা। ড্রাইভার লোকটা খবিস খবিস চেহারা করে তাকিয়ে আছে। আমি বললাম, কোথায় যাব? সায়লা বলল, আমার বাসায়, ছাদ ফাকা। চাঁদ দেখার সুবর্ণ সুযোগ। কি বিপদ! তাকে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে বললাম যে আমি আসছি।মেয়েটা কলেজে পরে। আমার কাছে কিছুদিন ইংলিশ পড়েছিল। বিরাট বাবার সুন্দরি মেয়ে। যাইহোক, সায়লা গাড়িতে উঠে চলে গেল। খুব শান্তি লাগছে মনের মধ্যে। যাচ্ছি বাবলু মামার চা এর দোকানে। আমি প্রায় সব সময় ওখানে চা খেয়ে বাসায় ঢুকি। আকাশের দিকে তাকিয়ে হাঁটছি, গেল জুতার বলটু ছিরে। খুরিয়ে খুরিয়ে চা এর দোকানের কাছে গেলাম। যেতে না যেতেই মামা এক কাপ চা ধরিয়ে দিল। মনে হল, অন্য কারোর চা আমাকে খালাস করে দিল। দোকানের পাশেই একটা ছোট গলি আছে। ওখানে গিয়ে আমি চা খাই। গলিটার ভেতর দিকে একটা প্রশস্ত রাস্তা। এখান থেকে চাঁদ টা খুব ভাল করে দেখা যাচ্ছে। অবাক ব্যাপার, সায়লা একটা চা এর কাপ হাতে পাশে দাড়িয়ে। আমি অবাক হলাম।মেয়েটা শাড়ী পরে এসেছে এই জোছনা ভেজা অন্ধকারে। আমি তাকিয়ে আছি। সায়লা খালি পায়ে। আমার হাত টা ধরে হাঁটতে লাগলো।আমিও নির্বাক, বাধ্য হয়ে খালি পায়ে সর্বনাশের পথে হাঁটছি । একটু হেটে আমরা থামলাম, আমি চাঁদ দেখছি। হটাত সায়লা কেদে উঠলো। বলল, হৃদয় ভাইয়া, আপনি কিছু কি বুঝেন না? আমি তার ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম। বললাম, ভাইয়া ডাকলে বুঝার সুযোগ কোথায়?
সায়লা হাহা করে হেঁসে উঠলো, আমি মুচকি হাসলাম। দুজনের হাসিতেই হয়ত চাঁদটা এত স্বচ্ছ দেখাচ্ছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

× How can I help you?